ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৭ জুন ২০২৫ , ০১:৫৪ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* আবারও সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট, আতঙ্কে জনসাধারণ * উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু * যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী গণবিক্ষোভ * আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত চারজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের * পুলিশ নয়, ভারি মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি * ঈদযাত্রায় খানাখন্দ ও বৃষ্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক: অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার * বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ফাহামিদুলের, একাদশে নেই শমিত সোম

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

repoter

প্রকাশিত: ০৪:৪৮:৩১অপরাহ্ন , ২৯ মে ২০২৫

আপডেট: ০৪:৪৮:৩১অপরাহ্ন , ২৯ মে ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

টোকিওতে সেমিনারে কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মোচনের ঘোষণা, স্বাক্ষর হলো দুটি সমঝোতা স্মারক

জাপানে চলমান শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সেমিনারে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জাপানের সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এবং বাংলাদেশ ও জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

সেমিনারে বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাপানে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তিনি এই দিনটিকে নিজের জীবনের অন্যতম রোমাঞ্চকর ও অনুপ্রেরণাদায়ী দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি চাকরির সুযোগ নয়, বরং জাপানকে জানার, শেখার এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধনের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) এর সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রথম সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয় বিএমইটি ও কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস)-এর মধ্যে, যা একটি জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ। দ্বিতীয় সমঝোতা হয় বিএমইটি, জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (এনবিসিসি) এবং জেবিবিআরএ (জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি)-এর মধ্যে।

অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে বাংলাদেশের বিপুল যুবসম্ভার প্রসঙ্গে বলেন, ১৮ কোটির এই দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বয়স ২৭ বছরের নিচে। সরকারের দায়িত্ব হলো এই তরুণদের জন্য আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেওয়া। এই ধরনের উদ্যোগ সেই পথ উন্মুক্ত করে দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাপানের শিজুওকার কর্মপরিবেশ উন্নয়ন সমবায়ের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার প্রতিনিধি পরিচালক মিতসুরু মাতসুশিতা বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই আগ্রহ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যাদের প্রতিভাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিকশিত করা প্রয়োজন।

এনবিসিসির চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে স্মরণ করেন যে, প্রায় ১৪ বছর আগে অধ্যাপক ইউনূস জাপানে এসেছিলেন এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। তিনি বলেন, তাদের ফেডারেশন বাংলাদেশের তরুণ ও দক্ষ শ্রমিকদের একটি সম্ভাবনাময় উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে, যারা উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। তিনি ঘোষণা দেন যে, আগামী পাঁচ বছরে তারা এক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে জাপানে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

ওয়াতামি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল প্রতি বছর বাংলাদেশে ১৫০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং ভবিষ্যতে এটি ৩০০০ শিক্ষার্থী পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে, তারা সহজেই জাপানের কর্মবাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনি অ্যান্ড স্কিল্ড ওয়ার্কার কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (জেইটিসিও) চেয়ারম্যান হিরোআকি ইয়াগি জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা এবং সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা নানা ক্ষেত্রে দক্ষ হলেও এখনও ভাষা শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, যা দূর করা দরকার।

জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিকি হিরোবুমি বলেন, দেশটিতে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং শ্রমিক সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে আগত কর্মীরা জাপানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হতে পারে। তিনি বলেন, এটি কেবল বাংলাদেশের জন্যই নয়, জাপানের জন্যও একটি আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে শ্রমিক সংকট এক কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ এই বিশাল সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আনতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে এই লক্ষ্যে কাজ করছে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সেমিনারে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উভয় দেশের জন্যই এটি লাভজনক একটি উদ্যোগ বলে মত দেন। অনুষ্ঠানের শেষাংশে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, বাংলাদেশ-জাপান শ্রম সহযোগিতা আরও শক্তিশালী ভিত্তি পাবে এবং আগামী দিনে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা অর্জন করবে।

repoter