
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান ও সাবেক ১২ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আজ রোববার (২০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যে alleged গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে, সেই মামলার শুনানি উপলক্ষে তাদের ট্রাইব্যুনালে তলব করা হয়েছে।
এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় অভিযুক্তদের হাজিরের জন্য আজকের দিনটি ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগে বলা হয়, আন্দোলনের সময় পরিচালিত সহিংস অভিযান ও অভিযুক্তদের নির্দেশনায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং তা আন্তর্জাতিক অপরাধের আওতায় পড়ে।
হাজিরা দেয়ার জন্য যাদের তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক শিল্পমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তালিকায় আরও রয়েছেন জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এছাড়াও রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলমসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা ছাত্র আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় শক্তি ও প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে সহিংস দমন অভিযানে নেতৃত্ব দেন, যার ফলে প্রাণহানি ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া অভিযুক্তরা তখনকার পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছেন।
আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুনানির দিন অভিযুক্তদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং আদালত তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবে। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের কারো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।
এই মামলাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ এর বিচারিক গুরুত্বের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, বিচারিক প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মামলার রায় দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, আদালতে অভিযুক্তরা কী ধরনের সাফাই পেশ করেন এবং মামলার ভবিষ্যৎ গতিপথ কোন দিকে এগোয়।
repoter