
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এর ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহ দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী মত দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়ে এসেছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত, দলটি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ভিন্নমতের জনগণের ওপর হত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক তৎপরতা চালিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এ সময়ে দলটির নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল ও অকার্যকর করার জন্য একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে এবং জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বেআইনি তৎপরতা চালিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে সাংগঠনিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের প্রমাণ সরকারের কাছে রয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি ও এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের যাবতীয় রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও প্রচারমূলক কার্যক্রম স্থগিত রাখা সমীচীন বিবেচনা করা হয়েছে।
সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে দলটির সকল প্রকাশনা, প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন, মিছিল-মিটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচার বা কর্মসূচি। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে এসব সংগঠনের প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করাও নিষিদ্ধ বলে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনগণের জানমালের সুরক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের মতে, দেশব্যাপী শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি সময়োপযোগী ও অপরিহার্য সিদ্ধান্ত।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এবং দলটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার শেষ না হয়।
এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকে একে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলেও অভিহিত করছেন। তবে এই প্রজ্ঞাপন নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো জানানো হয়নি।
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার ফলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং দেশের রাজনীতির চিত্র কেমন হবে তা নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে।
repoter