
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশে দলটির নেতারা আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানান। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে গণহত্যার যে ইতিহাস রয়েছে, তাতে তাদের আর রাজনীতি করার অধিকার নেই।
সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আর বাংলার মাটিতে নেই। গণহত্যার জন্য এই দলের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জুলাই ঘোষণা পত্রের কথা বলেছিলাম, সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের কারণে সেই দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান আজ ৯ মাস অতিক্রম করল, অথচ আমাদের এখনো আন্দোলন করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে। এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা।”
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নিরাপরাধ আলেম সমাজের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এরপর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও হামলা, গুলি ও গণহত্যা করেছে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের বিচার চলাকালীন নিবন্ধন বাতিল করে সংগঠন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।”
সমাবেশে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, “গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিচার করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যাবে না। দেশের জনগণ সেটা নিশ্চিত করবে।”
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে টালবাহানা চলছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমাদের হাইকোর্ট নয়, জনগণের রায়ই শেষ কথা। জনগণের সেই রায়ের ভিত্তিতেই দ্রুত এই দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অজুহাতে আর দেরি সহ্য করা হবে না।”
সমাবেশে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, “এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের শিকড় উপড়ে ফেলা সময়ের দাবি।”
আরেক নেতা আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, “খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। মৌলিক সংস্কার ছাড়া যেকোনো নির্বাচনের উদ্যোগ হবে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, এখন দরকার বিচার ও সংস্কার। বিভিন্ন বক্তৃতায় বলা হয়, আওয়ামী লীগের এই বাংলায় আর কোনো রাজনৈতিক ঠিকানা থাকবে না। গুলিস্তান এলাকায় ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’—এসব স্লোগানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আলী নাছের খান, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সাইফুল্লাহ হায়দার, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর, মাহিন সরকার, তাহসীন রিয়াজ, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী, মোস্তাক আহমেদ শিশিরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং বলেন, সময় এসেছে দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয়ের পতাকা উড়ানোর।
repoter