
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে তথাকথিত 'পাকিস্তানপন্থা' নামে কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। ১৩ মে (মঙ্গলবার) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের ভিন্নমতাবলম্বীদের পাকিস্তানপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা একটি বিভ্রান্তিকর প্রচার যার পেছনে ভারতীয় আধিপত্যবাদী রেটোরিক সক্রিয় রয়েছে। তিনি মনে করেন, এই ধরনের প্রচারণা দেশের অভ্যন্তরে ঐক্য বিনষ্ট করে এবং বহিরাগত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করে।
আজিজুল হক বলেন, ইন্ডিয়ান মিডিয়াগুলো নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতাকে ‘পাকিস্তানপন্থী’ হিসেবে তুলে ধরছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক ধরনের রাজনৈতিক ফ্রেমিং। বর্তমান সময়ে এই ধরনের ট্যাগ দেওয়া মানে হচ্ছে ভারতীয় রেটোরিককে এদেশে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার আমলে এই রেটোরিকের অজুহাতে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন, নির্যাতন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন এক আত্মঘাতী ও পশ্চাদমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে চাই না যেখানে ভিন্নমতের উপর দমন-পীড়ন চালানো হবে। ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ-উত্তর বাংলাদেশে এসব ধ্বংসাত্মক রেটোরিক আর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখনই সময় ঐক্যের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা নয় বরং সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার।”
আজিজুল হক ইসলামাবাদী তাঁর বিবৃতিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিকাশে আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসলমানদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, উপমহাদেশে মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থেই ১৯৪৭ সালের ঘটনা ঘটে, এরপর পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, “১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪—এই তিনটি ঘটনাই বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসের মূল ভিত্তি। আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয় এই ধারাবাহিকতা থেকেই গড়ে উঠেছে। অথচ ভারতীয় মিডিয়া ও রাজনৈতিক রেটোরিক এই ঘটনাগুলোকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে মুসলমানদের বিরোধিতা করে। এধরনের ন্যারেটিভ আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।”
হেফাজতের এই নেতা আরও অভিযোগ করেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ইসলামপন্থীদের ওপর ন্যায়বিচারহীনভাবে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে এবং ভারতীয় প্রভাবিত রেটোরিক ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তানপন্থা’ তকমা লাগিয়ে বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। তিনি এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হতে না দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “আমরা বিশ্বাস করি না যে বাংলাদেশে ‘পাকিস্তানপন্থা’ বলে কোনো মতাদর্শ বা গোষ্ঠী বিদ্যমান আছে। এই রাষ্ট্রের মানুষ ‘বাংলাদেশপন্থি’ চেতনায় বিশ্বাসী। সেই শক্তিকে আরও সুসংহত করতে হলে আমাদের অতীতের সব ঐতিহাসিক পর্বকে সম্মান জানাতে হবে এবং জাতিগত ঐক্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।”
বিবৃতির শেষ অংশে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থেকে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের ইতিহাসকে অস্বীকার নয়, বরং সম্মিলিতভাবে তা ধারণ করেই রাষ্ট্র ও রাজনীতি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে।”
repoter