ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৭ জুন ২০২৫ , ১২:৪৪ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* আবারও সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট, আতঙ্কে জনসাধারণ * উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু * যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী গণবিক্ষোভ * আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত চারজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের * পুলিশ নয়, ভারি মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি * ঈদযাত্রায় খানাখন্দ ও বৃষ্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক: অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার * বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ফাহামিদুলের, একাদশে নেই শমিত সোম

বাতিল কারিকুলামে ৪ কোটি টাকার প্রশিক্ষণ, বাড়ছে ক্ষোভ ও দুর্নীতির অভিযোগ

repoter

প্রকাশিত: ০২:৩৩:১৪অপরাহ্ন , ১৭ মে ২০২৫

আপডেট: ০২:৩৩:১৪অপরাহ্ন , ১৭ মে ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

বাতিল হয়ে যাওয়া জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম (পরিমার্জিত ২০২১) বিস্তরণ কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি)। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৩০১টি ব্যাচে এই প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নের জন্য কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এই প্রশিক্ষণ ঘিরে উঠেছে নানা অভিযোগ। জানা গেছে, অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখাকে প্রভাবিত করে ইউআরসি ইন্সট্রাক্টররা মাঠপর্যায়ে এই প্রশিক্ষণ আনতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি অর্থবছরের শেষ দিকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে এমন আয়োজন ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরদের সুবিধা দিতে করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যে কারিকুলাম বাতিল করে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন চলমান রয়েছে, সেই বাতিল কারিকুলাম নিয়ে কেন এখনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে? এতে করে মাঠপর্যায়ে শিক্ষক, অভিভাবক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম বিভাগের নবনিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের জন্য দিনের এই কারিকুলাম প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যেই ইউআরসি-অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ইন্সট্রাক্টররা।

উল্লেখ্য, গণআন্দোলনের মুখে গত আগস্ট বাতিল করা হয় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম-২০২১। সেইসঙ্গে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নতুন মূল্যায়ন নির্দেশিকা তৈরি করে মাঠপর্যায়ে পাঠিয়েছে। এর আলোকে মে থেকে শুরু হয়েছে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন।

এর আগেও ২০২৩ সালের জুলাই অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির ধারাবাহিক মূল্যায়ন (ডায়েরি-ডায়েরি-২) স্থগিত করা হয়। তার পরেও পূর্ববর্তী সরকারের প্রণীত কারিকুলামের ওপর এই প্রশিক্ষণ কেন দেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠেছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এই প্রশিক্ষণে প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষণার্থী প্রতি উপকরণ প্রশাসনিক খরচ বাবদ ৫০০ টাকা এবং ব্যাচপ্রতি ২,৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে এই খরচ ছিল অনেক কম—জনপ্রতি মাত্র ৬০ টাকা।

একাধিক ইন্সট্রাক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই অতিরিক্ত বরাদ্দ থেকেই অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা। একটি স্ক্রিনশট দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে যেখানে লেখা রয়েছে, ‘হায়রে কপাল!!! উপকরণে ৫০০ টাকা হারে পোস্টার-পেপার, সাইনপেন, কলম, ইরেজার। আবার প্রশাসনিক ব্যয়েও সেইম ২৫০০ টাকা। আমি প্রশিক্ষক হিসাবে দেখলাম ৫০০ টাকার উপকরণে ৪০ টাকা ব্যয় আর ২৫০০ টাকাতো কোল্ডস্টোরে আছে।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘এখান থেকে অনেকেই ভাগ পায়। অথর্ব ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরের একার পক্ষে এত টাকা আত্মসাৎ করা অসম্ভব।’

দেশসেরা প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামি রবিবার থেকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, যদি এটি পুরাতন কারিকুলামের আলোকে হয় তাহলে এর থেকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান বা পেশাগত দক্ষতায় কোনও সুফল আসবে না।

প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকেই এই প্রশিক্ষণের বিষয়ে অবগত আছেন। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত আয়োজন, যার মূল উদ্দেশ্য অর্থ আত্মসাৎ। কিছু ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ রক্ষার এই আয়োজন অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. ইমামুল ইসলাম বলেন, "এখন অফিস শেষ হয়ে গেছে। আমি অফিসের বাইরে আছি। কিছু বলতে হলে কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। আগামী রবিবার বিস্তারিত বলবো।"

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মীর্জা আজিজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, "যে খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যদি সেই খাতে অর্থ ব্যয় না হয় তাহলে সেটি সরকারের ফান্ডে ফেরত যাবে এবং অন্য খাতে ব্যয় হবে।"

এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই বিষয়ে বলেন, "যে কারিকুলাম বাতিল হয়ে গেছে, সেটির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া অনৈতিক অগ্রহণযোগ্য। এটি পুরোপুরি কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এতে পেশাগত উন্নয়ন হবে না বরং জনসাধারণের অর্থের অপচয় হবে।"

তিনি আরও বলেন, "ধরনের প্রশিক্ষণ বরাদ্দ অন্যখাতে, যেমন দক্ষতা উন্নয়ন বা নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রশিক্ষণে ব্যয় করা যেত। জনগণের অর্থের অপচয় দুর্নীতির এই উদাহরণ তদন্তের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন, অর্থ ছাড় এবং বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।"

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, "এই বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।"

repoter