
ছবি: ফাইল ছবি
ঢাকা, শনিবার: নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে বিএনপি সম্পর্কে ভুল তথ্য সন্নিবেশিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে শিক্ষাবর্ষের নতুন বইয়ে সন্নিবেশিত এই ‘ভুল তথ্য’ দ্রুত সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য পুনর্বিন্যাস করা নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের ৭৩ নম্বর পৃষ্ঠার ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন ব্যবস্থা’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিএনপির জন্ম সেনা ছাউনিতে। তিনি অভিযোগ করেন, এই তথ্য মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার একটি ষড়যন্ত্র।
তিনি আরও বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা পাঠ্যপুস্তকে বিএনপিকে হেয় করার একটি অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি কোনো সেনাছাউনিতে জন্ম নেওয়া দল নয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি গঠনের ঘোষণা দেন। তখন তিনি ছিলেন দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। সুতরাং, সেনাছাউনিতে দল গঠনের তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরও অভিযোগ করেন, পাঠ্যপুস্তকে এই ভুল তথ্যের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে ইতিহাসের বিকৃত রূপ তুলে ধরা হচ্ছে। তিনি বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে শুধু বিএনপি সম্পর্কে ভুল তথ্যই নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়েও একতরফা প্রশংসা করা হয়েছে। বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এটি শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের একচেটিয়া প্রচারণারই প্রতিফলন।”
তিনি পাঠ্যক্রম প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “এনসিটিবির ভেতরে-বাইরে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ করছেন, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করে শিক্ষার্থীদের সামনে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
রিজভীর বক্তব্যে উঠে আসে, পাঠ্যবইয়ে বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য সংযোজনের মাধ্যমে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত। তিনি বলেন, “বিএনপি এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্য যারা দায়ী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ফরিদপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও এ সময় বক্তব্য রাখেন।
রুহুল কবির রিজভী জানান, বিএনপি পাঠ্যপুস্তক থেকে ভুল তথ্য সরিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিহাসের নিরপেক্ষ ও সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা দেশের শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত হতে দিতে পারি না। ইতিহাসকে বিকৃত করার এ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দল একসঙ্গে কাজ করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা আরও জানান, শিক্ষার্থীদের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার বিষয়টি বিএনপির অগ্রাধিকার। তারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে আহ্বান জানান।
repoter