
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও সাবেক অধিনায়ককে নির্বাচিত করলেন বিসিবি পরিচালকরা, ফারুক আহমেদকে সরানোর নাটকীয় প্রক্রিয়ার পর এই পরিবর্তন
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আজ শুক্রবার বিকেলে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের এক জরুরি সভায় তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এর আগে দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিসিবি পরিচালক হিসেবে মনোনীত করে।
বিসিবির নেতৃত্ব নিয়ে গত দুই দিন ধরে চরম নাটকীয়তা এবং অনিশ্চয়তা চলছিল। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। গত বুধবার গভীর রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, সরকারের পক্ষ থেকে ফারুক আহমেদকে বিসিবির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিয়মবিরুদ্ধ হওয়ায়, সরকার সরাসরি পদচ্যুত না করে বরং পদত্যাগের জন্য ফারুক আহমেদকে চাপ দিতে শুরু করে।
তবে ফারুক আহমেদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কোনোক্রমেই পদত্যাগ করবেন না। এমন অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিসিবির পরিচালক হিসেবে ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এনএসসির ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধভাবেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, যা তদন্তাধীন রয়েছে। তিনি তার অপসারণকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে আজ বিকেলে বিসিবির পরিচালকদের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম পথিকৃৎ আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বুলবুল দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিমণ্ডলে কাজ করে আসছেন। আইসিসির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রশাসনিক ও কৌশলগত দিকেও তার দক্ষতার প্রমাণ রয়েছে।
বিসিবির নতুন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বুলবুল। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আজীবনের। এই দায়িত্ব বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আমি আশাবাদী যে, সবার সহায়তায় আমরা ক্রিকেটকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারব।”
ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিসিবির একাধিক পরিচালক জানিয়েছেন, পরিস্থিতির অবনতি রোধ করতে এবং বোর্ডে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও অনেকের মতে, সরকারের প্রত্যক্ষ ইচ্ছা এবং রাজনৈতিক প্রভাবই ছিল এই পরিবর্তনের পেছনের মূল চালিকাশক্তি।
পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। ফারুক আহমেদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইসিসি কী পদক্ষেপ নেয়, তা আগামী দিনে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ স্থিতি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তবে আপাতত, বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো আমিনুল ইসলাম বুলবুলের হাত ধরে।
এই পরিবর্তন শুধু একটি ব্যক্তিকে নয়, বিসিবির নেতৃত্ব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখার বিষয়, নতুন সভাপতির অধীনে বাংলাদেশের ক্রিকেট কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা কতটা বজায় থাকে।
repoter