
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত বৈঠকটি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার, ১৩ জুন, লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পার্ক লেনের একটি হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে হাসিমুখে হোটেল ত্যাগ করতে দেখা যায় তারেক রহমানকে।
এই বৈঠক ও তার পরবর্তী যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের মন্তব্য এসেছে। কেউ এই বৈঠককে গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এর পরিপূর্ণতা বা স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি এই আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা হয়ে থাকে, তবে সেটি দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তিনি নির্বাচনের পূর্বে সংস্কারের অর্ধেক বাস্তবায়নকেও ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বৈঠকটিকে নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা নিরসনের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন। তিনি মনে করেন, এই বৈঠক সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে বোঝাপড়ার দরজা খুলে দিয়েছে এবং সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বৈঠকের পর নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ডিসেম্বরকে উল্লেখ করেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণার দাবি জানান এবং বৈঠক পরবর্তী কিছু বিষয়ের যেমন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার উপস্থিতি ও প্রধান উপদেষ্টার সফর খরচের ব্যাপারে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এই বৈঠক রাজনৈতিক সংকট নিরসনের একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। তিনি বলেন, ইউনূস ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না, আর বিএনপিও সংস্কারবিরোধী নয়। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং উভয় পক্ষের উপদেষ্টাদের কিছু মন্তব্য এই দূরত্ব বাড়িয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার প্রস্তাবকে গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতি বলে মনে করেন। তার মতে, আলোচনার মাধ্যমে যে ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে, তা সংস্কার ও নির্বাচন—দু’টোকেই বাস্তবায়নের পথ সুগম করছে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বোঝাপড়াকে স্বাগত জানান। তিনি মনে করেন, আবহাওয়ার দিক বিবেচনায় জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা যুক্তিযুক্ত হবে এবং ডিসেম্বরে শর্ত অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণকে সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, তারিখ নির্ধারিত হলে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বোচ্চ সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কারে মনোযোগ দিতে পারবে। তিনি মনে করেন, রমজানের আগেই নির্বাচন হলে তা সময়োপযোগী হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, নির্বাচনের সময় পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শহীদ পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমান বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে জানান, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। তবে তার আগে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় যথাযথ অগ্রগতি অর্জন অপরিহার্য হবে।
এ বিষয়ে এনসিপি নেতা আদীব এই শর্তকে ইতিবাচকভাবে স্বাগত জানান। তবে নির্বাচনের পূর্বে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং বিচার ও নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বৈঠকটি ইতিবাচক হলেও সেখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়টি সেভাবে প্রাধান্য পায়নি।
এই বৈঠক ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। তবে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী হবে, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতার ওপর।
repoter