
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
"প্রয়োজনীয় সংস্কারে অধ্যাদেশই যথেষ্ট, সংবিধান সংশোধনের দরকার নেই বলেও মত বিএনপি নেতার"
জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার মতো একটিও কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যেসব সংস্কার করা দরকার, সেগুলো করা সম্ভব এবং সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছাড়াই শুধুমাত্র অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে সময়মতো নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।
সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আয়োজিত সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে আলোচনায় অংশ নিতে এসেছিলাম। তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দও এই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের সঙ্গে সংস্কার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা কীভাবে, কখন এবং কোন কাঠামোয় হবে— সে বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি।
তিনি জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে যে, সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে অনেক সময় অতিবাহিত করেছে। তিনি বলেন, আমরা পূর্ববর্তী আলোচনা এবং কমিশনের সভাগুলোর প্রতি আন্তরিক ছিলাম। কমিশনের প্রস্তাবিত খসড়া এবং বিভিন্ন দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি রিপোর্টও করা হয়েছে। আমরা সেই রিপোর্টের ওপর দলগতভাবে বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছি এবং অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। এসব কার্যক্রম শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আহ্বানে পুনরায় সংলাপে অংশ নিয়েছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সব দলের মধ্যে সব বিষয়ে একমত হবে— এমনটি আশা করাও অবাস্তব। কিছু কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশের স্বাভাবিক অংশ। তবে যেসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে, সেগুলো পরবর্তী সরকার জাতীয় সংসদে উত্থাপন ও অনুমোদনের মাধ্যমে আইনি রূপ দিতে পারবে। তার আগেই যদি ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সনদ স্বাক্ষরিত হয়, সেটাই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পেছানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব এবং তা নিয়েই সকল প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। সংবিধান সংশোধনের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় না গিয়েও অনেক বিষয়ে শুধুমাত্র অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব। যে সব সংস্কার দরকার, তা এক মাসের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করা যেতে পারে।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আর তা তখনই সম্ভব হবে যখন সকল পক্ষ আন্তরিকভাবে আলোচনায় অংশ নেবে এবং পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে। সংলাপ ও কমিশনের প্রতিবেদনগুলোকে সামনে রেখে একটি গ্রহণযোগ্য পথরেখা তৈরি করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের দল বারবার বলেছে যে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আগে থেকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপে অংশগ্রহণ এবং নিজেদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরায় আলোচনা পরবর্তী ধাপে এগোবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, রাজনীতি মানেই মতবিনিময়, মতপার্থক্য এবং সে মতের ভিত্তিতে সমাধান খোঁজা। আমরা সেই দিকেই এগোচ্ছি এবং এর জন্য সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেসব বিষয়ে সকলের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব, সেগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে মতানৈক্যের বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। মূল কথা হচ্ছে, সংলাপ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি শক্ত অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে— যেখানে সময়মতো নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা, সংবিধান সংশোধন ছাড়া অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের পথ এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের গুরুত্বকে সামনে আনা হয়েছে।
repoter