
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনী হলফনামা ও ট্যাক্স ফাইল যাচাইয়ে তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়ার দাবি দুদক চেয়ারম্যানের
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী হলফনামা ও ট্যাক্স ফাইল যাচাই করে সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার দাবি অনুযায়ী, হলফনামায় উল্লিখিত সম্পদের পরিমাণ ও প্রকৃত অনুসন্ধানে পাওয়া সম্পদের পরিমাণের মধ্যে স্পষ্ট গরমিল রয়েছে।
দুদকের একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা যে সম্পদ বিবরণী জমা দেন, তার সঙ্গে আয়কর নথি এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম এমন গরমিল চিহ্নিত করেছে। এসব গরমিলের মধ্যে কিছু কিছু সম্পদ সম্পূর্ণভাবে গোপন রাখা হয়েছে বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া কিছু সম্পদের তথ্য আয়কর রিটার্নে উল্লেখ নেই, আবার আয়কর রিটার্নে যে সম্পদের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর কিছু হলফনামায় অনুপস্থিত। এমনকি কিছু সম্পদ সরাসরি কোনো নথিপত্রেই নেই, তবে আমাদের অনুসন্ধান ও তথ্য বিশ্লেষণে সেগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।”
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান আরও জানান, তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ভূমি রেকর্ড ও কর অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করেছেন এবং সেখানে একাধিক অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। তার ভাষায়, “আমরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করছি না, বরং আইন অনুযায়ী যেটি আমাদের দায়িত্ব সেটিই পালন করছি। যার বিরুদ্ধেই প্রমাণ মিলবে, তাকে আমরা আইনের আওতায় আনব।”
এদিকে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে প্রার্থীদের নির্ধারিত ফরমে নিজ এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদের বিবরণ দিতে হয়। পাশাপাশি, সর্বশেষ তিন বছরের আয়কর রিটার্ন সংযুক্ত করাও বাধ্যতামূলক। দুদক সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন থেকে এসব হলফনামার অনুলিপি সংগ্রহ করে যাচাই শুরু করে।
এমন অভিযোগ সামনে আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতামত প্রকাশ করছেন, কেউ কেউ সরকারের প্রতি আস্থা হারানোর কথা বলছেন, আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে দেখছেন।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কোন কোন সম্পদ গোপন করা হয়েছে বা এগুলোর আনুমানিক মূল্য কত—এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত জানানো হয়নি।
চলমান অনুসন্ধান কতটা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়, এবং এর ভিত্তিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়—তা সময়ই বলে দেবে। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদ নিয়ে এমন তদন্তের তথ্য প্রকাশে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে দুদকের ভূমিকা এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
repoter