
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ফ্রান্সে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠেছে ‘ফ্রাঙ্কো-বাংলা স্কুল’। ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানটি এবার প্যারিসের উপকণ্ঠ মেট্টো হোস এলাকায় তাদের নতুন শাখার কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন অফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজনে পরিপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা প্রবাসীদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ফ্রাঙ্কো-বাংলা স্কুলের অবদানকে প্রশংসা করেন এবং ফরাসি ভাষা শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যমী ভূমিকা তুলে ধরেন। শিল্প-সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক সদস্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পুরো আয়োজনটির সঞ্চালনায় ছিলেন শাফিউল আলম সুমন।
স্বাগত বক্তব্যে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এইচ এম আমীর নিজের শিক্ষাজীবন এবং প্রবাসে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি জানান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ফরাসি ভাষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে এবং অল্প সময়ে কার্যকরভাবে শেখার কৌশল উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ গবেষণার পর ২০১৩ সালে ‘ফ্রাঙ্কো-বাংলা’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এইচ এম আমীরের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার ডোমরাকান্দি গ্রামে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক শেষ করে তিনি ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যে যান। পরে ২০১২ সালে ফ্রান্সে প্রবেশ করেন এবং ২০১৫ সালে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান। ভাষা শিক্ষায় আগ্রহ থেকেই ২০২২ সালে তিনি সোরবোন নিউভেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতির উপর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি বর্তমানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে (এল.এল.বি) অধ্যয়নরত।
‘ফ্রাঙ্কো-বাংলা’ স্কুলে বর্তমানে শুধু ফরাসি ভাষা শিক্ষা নয়, বরং প্রবাসীদের সহায়ক আরও নানা ধরনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইনি পরামর্শসেবা, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, গ্রাফিক্স ও মাল্টিমিডিয়া কোর্স, শিশুদের হোমওয়ার্ক সহায়তা, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম।
ফরাসি ভাষা শেখার চাহিদা ও প্রয়োজনে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় তৈরি হয়েছে ডিইএলএফ, টিসিএফ ও টিইএফ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তিনটি পূর্ণাঙ্গ বই, যা বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এম সি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ বদরুল বির হারুন, কাব্য কামরুল, কবি লোকমান আহম্মদ আপন, সাংবাদিক আব্দুল মালেক হিমু, সাবুল আহমদসহ আরও অনেকে। বক্তারা বলেন, ফ্রাঙ্কো-বাংলা স্কুলের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণমূলক কোর্সগুলো প্যারিসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং যারা ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তাদের জন্য এগুলো অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
তারা আরও বলেন, ফ্রাঙ্কো-বাংলা স্কুল কেবল একটি ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফরাসি মূলধারার সঙ্গে সংযুক্ত করতে এবং তাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
নতুন শাখার উদ্বোধনের মাধ্যমে স্কুলটি তাদের সেবার পরিসর আরও সম্প্রসারিত করল এবং ফ্রান্সে প্রবাসীদের মধ্যে ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতির বিস্তারে এক নতুন অধ্যায় শুরু করল।
repoter