
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক মুখপাত্র বললেন, গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতা নেই, বাইডেন প্রশাসনের নীতিগত দ্বন্দ্বের কথাও প্রকাশ
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ও জো বাইডেন প্রশাসনের সময় দায়িত্ব পালনকারী ম্যাথিউ মিলার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। আরব নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মিলার জানান, যদিও তিনি গণহত্যার মতো ঘটনাকে স্বীকার করেন না, তবু গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধের শামিল।
মিলার বলেন, যুদ্ধাপরাধ বোঝার দুটি দিক রয়েছে—এক, যদি কোনো রাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধ নীতি গ্রহণ করে এবং দুই, এমন বেপরোয়া আচরণ যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পৌঁছায়। এই প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এমন কাজ করেছে যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যদিও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের স্তরে বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়।
তিনি আরও জানান, গাজার যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে নীতিগত দ্বন্দ্ব ছিল। অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখা ও ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন স্তরে বিতর্ক চলেছিল। ২০২৪ সালের বসন্তে তারা গাজায় ব্যবহারের অনুপযোগী মনে করে ইসরায়েলের কাছে পাঠানো ২,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা পাঠানো স্থগিত করে।
মিলার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের মধ্যেও নীতিগত ভিন্নমত ছিল, যদিও বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা সবসময় এক মত হয় না।
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা দেয়ার বিষয়ে প্রশাসনের ভেতরে বিতর্ক থাকলেও মিলার মনে করেন, প্রকাশ্যে তা প্রকাশ করলে হামাসকে উৎসাহিত করা যেত। হামাস তখন মনে করছিল, আন্তর্জাতিক চাপ ও সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে তারা তাদের দাবিপূরণে সক্ষম হবে। এই কারণেই তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেয়নি।
গাজার হাজারো বেসামরিক মানুষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিজের মধ্যেও সংশয় ছিল মিলারের। তিনি বলেন, তিনি মাঝে মাঝে ভাবেন মে থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়টাতে তারা কি আরও বেশি উদ্যোগ নিয়ে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে আনতে পারত কি না।
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গাজা যুদ্ধে বাইডেনের জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মিলার উল্লেখ করেন।
সাক্ষাৎকারে মিলার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে ‘অত্যন্ত দক্ষ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, উইটকফ যখন কারো সঙ্গে আলোচনা করতেন, তিনি যেন স্পষ্ট করতেন যে তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা তাকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
এই সাক্ষাৎকার থেকে বোঝা যায়, গাজার সঙ্কট ও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও অবস্থান সম্পর্কে বাইডেন প্রশাসনের ভেতরে বিভিন্ন স্তরের বিতর্ক এবং পর্যালোচনা এখনও চলমান রয়েছে।
repoter