ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৭ জুন ২০২৫ , ০১:০৪ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* আবারও সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট, আতঙ্কে জনসাধারণ * উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু * যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী গণবিক্ষোভ * আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত চারজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের * পুলিশ নয়, ভারি মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি * ঈদযাত্রায় খানাখন্দ ও বৃষ্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক: অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার * বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ফাহামিদুলের, একাদশে নেই শমিত সোম

ইরানের শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ২৫, আহত ৮০০ ছাড়িয়েছে

repoter

প্রকাশিত: ০২:৪২:৪৮অপরাহ্ন , ২৭ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০২:৪২:৪৮অপরাহ্ন , ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

ইরানের বন্দর আব্বাসের শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ জনে। একই সঙ্গে আহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ইরানের বৃহত্তম এবং সর্বাধুনিক এই বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হরমুজগান প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধান মোজতবা গাহরেমানি নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।

তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের বন্দর আব্বাস ছাড়াও শিরাজসহ আশপাশের বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিস্ফোরণের পরপরই শহিদ রাজি বন্দরের আকাশে ঘন ধোঁয়া দেখা দেয়। পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া ঘন ধোঁয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে উদ্ধারকারীদের কাজ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানান, এখন পর্যন্ত কোনও নাশকতার আলামত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, কনটেইনারের ভেতর থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত ঘটেছে।

বার্তা সংস্থা আইএলএনএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোসেন জাফারি জানান, ঘটনার পরপরই বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সবাইকে সরকারি তথ্যে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগছে। পুরো আগুন নিভে গেলে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা জানা যাবে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। আশপাশের ভবনের ছাদ এবং জানালার কাঁচ ভেঙে পড়েছে। পুড়ে গেছে বহু গাড়ি। স্থানীয় সময় দুপুরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে বন্দরের আশপাশের এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শহরের নাগরিকরা জানিয়েছেন, ৫০ কিলোমিটার দূরের এলাকাগুলোতেও বিস্ফোরণের কম্পন ও ধাক্কা অনুভূত হয়।

ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট একটি আগুন থেকেই বড় বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। প্রথমে একটি কনটেইনারে আগুন লাগে এবং দ্রুত তা অন্য কনটেইনারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রচণ্ড গরমের কারণে এবং দাহ্য পদার্থ থাকার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে বিশাল বিস্ফোরণে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার সময় তারা সালফারের মতো তীব্র গন্ধ অনুভব করেছিলেন। যদিও এখনও নিশ্চিত করে বলা হয়নি, কোন রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে একাধিক ছোট বিস্ফোরণও ঘটেছে। উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষাক্ত ধোঁয়া ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়।

ইরানি বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, শহিদ রাজি বন্দর ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এই বন্দর দিয়ে পৃথিবীর মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, যা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিস্ফোরণের ঘটনায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরের বেশ কিছু স্থাপনায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, বন্দরের কনটেইনার এলাকায় বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থল সনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকারি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, উদ্ধারকাজ ও তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধারকাজ শেষ করে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জরুরি বিভাগ সবাইকে সর্তকতা অবলম্বন করতে এবং বন্দরের কাছাকাছি এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা ইরানের সামুদ্রিক বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। হরমুজ প্রণালির কাছে অবস্থিত শহিদ রাজি বন্দরের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক। ফলে বিস্ফোরণের কারণে বন্দরের কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন শহর থেকে অগ্নিনির্বাপক দল, উদ্ধারকারী দল ও চিকিৎসক দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আহতদের চিকিৎসায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং আশেপাশের হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শহিদ রাজি বন্দর কেবল ইরানের নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর। এখানে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে পণ্য ওঠানামা হয়। তেল, রাসায়নিক দ্রব্য এবং শিল্পজাত পণ্য পরিবহনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কেন্দ্র। বিস্ফোরণের ফলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যাহত হয়েছে এবং সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে জাহাজ চলাচল।

দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও বিস্ফোরণের সম্ভাব্য নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে, এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা ছিল। তবে সমস্ত দিক তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, উদ্ধার তৎপরতা এখনও চলমান রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির জরুরি বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

repoter