
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া বিষয়গুলোই ঠাঁই পাবে চূড়ান্ত সনদে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সংলাপের শুরুতেই আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়; বরং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেগুলোই স্থান পাবে 'জুলাই সনদে'।
তিনি আরও জানান, জুলাই মাসের মধ্যেই এই ঐকমত্যভিত্তিক সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। এ লক্ষ্য পূরণে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা চলবে।
আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ে আজকের বৈঠকে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো। এসব প্রস্তাবের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐকমত্য গঠিত হয়নি। আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের সংস্কার, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোতে বিরোধী দলের নেতৃত্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়ানো এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদকাল নির্ধারণের বিষয়টি।
আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবধর্মী সনদ তৈরিই কমিশনের উদ্দেশ্য। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার ও গণতান্ত্রিক ভিত্তি শক্তিশালী করার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে কমিশনের উদ্যোগ।
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং ঈদের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, প্রথম দফার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। সেই সময়ে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে কমিশন। আজকের বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপ শুরু হলো।
কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ের আলোচনার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর পরবর্তী আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে পরিমার্জন ও পরিশীলনের কাজ চলছে। দ্বিতীয় দফার এই সংলাপ সেই প্রচেষ্টারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের আলোচনা প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা ও বাস্তবসম্মত অবস্থান নেওয়া জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলোচনার সারাংশ দলিল আকারে প্রস্তুত করে তা জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ নামে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। সনদটি রাজনৈতিক সংস্কার ও ভবিষ্যতের জাতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে একটি পথনির্দেশিকা হিসেবেও কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংলাপ ও আলোচনা অব্যাহত রেখে, অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মতামতকে মূল্যায়ন করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে কমিশন।
repoter