
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আয়োজিত লং মার্চে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার (১৪ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ে বসে পড়েন তাঁরা এবং সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, লং মার্চ চলাকালে পুলিশের হামলায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরাও। তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, এই হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কাকরাইল ছাড়বেন না।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশের এমন নৃশংস হামলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের ভাষ্য, যে পুলিশ সদস্যরা এই হামলায় অংশ নিয়েছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। প্রতিবাদস্থলে শিক্ষকরা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন আচরণে তাঁরা মর্মাহত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরিয়ে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অগ্রহণযোগ্য।
পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীনও। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে সরকার কতটা অগণতান্ত্রিক পথে হাঁটছে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের জন্য পথে নেমেছিল, অথচ তাদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি।
বিকেল ৩টার কিছু পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন এবং ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও সেখানে এসে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এদিন সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের দিকে লং মার্চ শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুরুতেই মিছিল শান্তিপূর্ণ থাকলেও কাকরাইল এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। তখনই লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করে পুলিশ। এতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
আহতদের অনেকে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো উসকানি ছাড়াই পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন। এই হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে পুলিশি হামলার ঘটনার ভিডিও ও ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকারকর্মীরা। সামাজিকমাধ্যমেও একাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিক হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন।
অবরোধের কারণে রাজধানীর কাকরাইল, শাজাহানপুর ও ফকিরাপুল এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তবুও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে তাঁদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি আজকের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে বসে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ওপর চালানো হামলার বিচার দাবি করছেন। পরিস্থিতি থমথমে হলেও এখন পর্যন্ত কোনো নতুন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের বিষয়ে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
repoter