
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর জি ব্লক ঈদগাহ মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর শাহআলী থানা বিএনপির কর্মিসভা ও রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার কর্মশালায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু ব্যক্তির মধ্যে ক্ষমতার মোহ কাজ করছে, যা আওয়ামী স্বৈরাচারের ইন্ধনে তৈরি হয়েছে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। তবে জনগণ কাউকে স্বৈরাচার হতে দেবে না, তারা এ ধরনের অপচেষ্টা প্রতিরোধ করবে।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে বাংলাদেশ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর দেশ আবারও স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। কিন্তু এখন যদি কেউ স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় এবং এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশের জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে, যাতে প্রকৃত অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। জনগণের নির্বাচিত সরকারই রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বসে নানা ষড়যন্ত্র করছে। দীর্ঘ ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তারা এখনো ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসেনি, ফলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ছিল ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার, কিন্তু জনগণ তা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। জনগণের আন্দোলনের মুখে তাদের পতন হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এই পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
কর্মসূচির প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে। এটি শুধু বিএনপির ঘোষণা নয়, বরং জাতির কাছে একটি প্রতিশ্রুতি।
তিনি বলেন, ৩১ দফা হলো জাতির মুক্তির সনদ। এর ভিত্তিতেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। এই রূপরেখার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক টিম প্রধান ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টির সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কর্মিসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহ্দী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মো. মোস্তফা জামান, মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এই কর্মিসভা ও কর্মশালায় অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইলেও জনগণ তাদের আর মেনে নেবে না। তারা আরও বলেন, দেশের মানুষ এখন প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে এবং এ লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কর্মীরা রাজপথ ছাড়বে না।
রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার কর্মশালায় বিভিন্ন দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এতে নেতারা জানান, বিএনপির লক্ষ্য শুধু ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক, উন্নয়নমুখী এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কর্মশালায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে বিএনপি সর্বোচ্চ লড়াই চালিয়ে যাবে এবং দেশের জনগণই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে।
repoter