ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৭ জুন ২০২৫ , ০৩:৩৮ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* আবারও সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট, আতঙ্কে জনসাধারণ * উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু * যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী গণবিক্ষোভ * আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত চারজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের * পুলিশ নয়, ভারি মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি * ঈদযাত্রায় খানাখন্দ ও বৃষ্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক: অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার * বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ফাহামিদুলের, একাদশে নেই শমিত সোম

মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংকের জন্য পৃথক আইন প্রয়োজন: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

repoter

প্রকাশিত: ০২:২৮:১৫অপরাহ্ন , ১৭ মে ২০২৫

আপডেট: ০২:২৮:১৫অপরাহ্ন , ১৭ মে ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক টেকসই রূপ দিতে আলাদা মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক গঠনের জন্য পৃথক আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ যদি কেবলমাত্র এনজিও পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে সেখানে প্রকৃত ব্যাংকিং পরিবেশ তৈরি হবে না। একে সামাজিক ব্যবসার কাঠামোয় নিয়ে আসতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন পৃথক আইনি ভিত্তি।

শনিবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো—এই ব্যাংকগুলো কেবল সদস্যদের সঞ্চয় গ্রহণ করতে পারে, তবে বাইরের কাউকে ডিপোজিটের সুযোগ দিতে পারে না। এটা ব্যাংকিং কার্যক্রমের একটি মৌলিক দিক থেকে তাদের বঞ্চিত করে। এজন্য একটি স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা এই সীমাবদ্ধতা দূর করবে এবং ক্ষুদ্রঋণকে একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিণত করবে।”

তিনি আরও বলেন, মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক গঠন এবং সেগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার সময় কার্যপরিধি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এসব ব্যাংক হবে অলাভজনক, সামাজিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কেউ ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের সুযোগ পাবে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীলতা নিশ্চিত করবে। এমন একটি কাঠামোর অধীনে গ্রামীণ ব্যাংক অন্যান্য উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করবে, যাতে তারা একই পথে এগিয়ে যেতে পারে।

ড. ইউনূস সময় বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকই হলো একটি প্রকৃত ব্যাংক। বাকি অনেক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র ব্যাংকের ছদ্মবেশে চলছে। তারা প্রকৃত অর্থে জনগণের ওপর আস্থা রাখে না, অথচ ব্যাংকিংয়ের মূল ভিত্তিই হওয়া উচিত বিশ্বাস। গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে উঠেছে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে। তাই এখানে জামানতের প্রয়োজন হয় না। কোনো জামানত ছাড়াই সদস্যদের ঋণ প্রদান করা হয়, যা অন্য কোনো ব্যাংকে দেখা যায় না।”

তিনি দাবি করেন, যেসব ব্যাংক নিজেদের প্রকৃত ব্যাংক বলে দাবি করে, তারা আজ জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের অনেকেই কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে বা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক এখনও টিকে আছে, কারণ এটি মানুষের পরিচয়, বিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী দিনে এই ধরনের সামাজিক ব্যাংকিংই হবে আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি।

ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, “যখন মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন কেউ আর চাকরির পেছনে ছুটবে না। বরং তারা নিজেরাই উদ্যোগ গ্রহণ করবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে এবং স্বনির্ভর হবে। গ্রামীণ ব্যাংক এই রূপান্তরের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।”

উল্লেখ্য, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি ভবনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেয়া হলো। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাইক্রোক্রেডিট খাতকে আরও কার্যকর সংগঠিত করতে চায়। ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত আইন ব্যাংকিং কাঠামো যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা, এনজিও প্রতিনিধিরা এবং মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রমে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি। উপস্থিত সবাই ক্ষুদ্রঋণ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

repoter