
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকায় রেলের জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৪ মে) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে রেলপথের দুই পাশে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক অবৈধ দোকান ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয় রেলওয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি যৌথ দল। অভিযানের শুরুতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে দোকানদারদের তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শুরু হয় অভিযান।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। ফলে ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছিল এবং রেলওয়ের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে রেল কর্তৃপক্ষ জমি পুনরুদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও উপ-সচিব নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, “দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি রেলের জমি দখলে নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অবৈধভাবে লিজ দিয়ে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করছি। দেশের যেসব জায়গায় রেলের জমি দখল হয়ে আছে, সেসব স্থানেও ধাপে ধাপে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।”
তিনি আরও জানান, রেলের জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার পর সেগুলো ভবিষ্যতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লিজ দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত মূল লক্ষ্য হচ্ছে রেলের জমি দখলমুক্ত করা এবং ট্রেন চলাচলের স্বাভাবিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, “এই জমিগুলো সম্পূর্ণভাবে রেলের মালিকানাধীন এবং আইনত এগুলোতে কেউ ব্যবসা করার অধিকার রাখে না। বহু বছর ধরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকান ও স্থাপনা সরিয়ে জায়গা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।”
অভিযান চলাকালে কিছু ব্যবসায়ী তাদের মালপত্র সরিয়ে নিতে সক্ষম হলেও অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন, তারা পূর্বে অন্যদের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে এখানে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। তারা বলছেন, হঠাৎ করে উচ্ছেদের কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে রেল ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব স্থাপনা অবৈধ এবং কোনো বৈধ অনুমতি বা লিজ কাগজপত্র নেই।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রেলওয়ের জমি পুনরুদ্ধারে দেশব্যাপী ধারাবাহিকভাবে এমন অভিযান চলবে। কোথাও প্রভাবশালীদের চাপে অভিযান বন্ধ করা হবে না। সরকারি সম্পদ রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন কর্মকর্তারা।
সানকিপাড়া এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, রেলপথের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলোর কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় যানজট ও জনদুর্ভোগ ছিল। এ ছাড়া আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছিল। রেলওয়ের অভিযানকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন, তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা।
অভিযান শেষে রেলওয়ে বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জায়গাগুলো পরিদর্শন করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা যাতে আর গড়ে না ওঠে, সে বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশ দেন।
ময়মনসিংহের এই অভিযান দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও রেলওয়ের ভূমি দখল সমস্যা সমাধানে উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। রেল কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে রেলপথের নিরাপত্তা এবং সরকারি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে প্রত্যাশা করছেন সাধারণ মানুষ।
repoter