
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বলেছেন, দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকায় নারীর নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শনিবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা ও সাইবার সুরক্ষার দাবিতে’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ কথা বলেন।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিটি ধাপে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নারীর এই অবদানকে অস্বীকার করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে স্বপ্ন তরুণেরা দেখছে, সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য জায়গা করে দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো ও ব্যবস্থা এর বিপরীত দিকে এগোচ্ছে।
সামান্তা শারমিন আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকায় নারীর নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট কাঠামো বিলোপের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেই কাঠামো এখনো টিকে আছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, নারী ও পুরুষ সমাজে সমান সুযোগ ও অধিকার পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা এখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। ধর্ষণের মতো ঘটনা এখন দৈনন্দিন অপরাধের মতো হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নারীর নাগরিক মর্যাদা, আত্মমর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি এখন প্রশ্নের মুখে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নারীরা পারিবারিক সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশকে একটি ‘অথর্ব রাষ্ট্রে’ পরিণত করছে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী নিপীড়ন, হেনস্তা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। শকুনদের দৃষ্টি থেকে বোনদের রক্ষা করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিতে যুক্ত নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারও চলছে।
সারজিস আলম বলেন, রাষ্ট্রকে সব ধর্ম ও চিন্তাধারার মানুষকে ধারণ করতে হবে। কোনো একটি ধর্মের বিশ্বাস, রীতিনীতি ও প্রথা অন্য ধর্মাবলম্বী বা ধর্মহীন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তিনি জনপরিসর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা যেমন সামনের সারিতে ছিলেন, আগামীর রাজনীতিতেও নারীদের নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় দেখতে চাই আমরা। সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, শিক্ষার্থী তাসমিয়া রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন।
এনসিপি নেতারা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণের দাবি জানান। তারা বলেছেন, নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্র ও সমাজকে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
repoter