
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইন কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (৬ মে) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল বলেন, সরকার একটি যুগোপযোগী, অধিকতর মানবাধিকার-সম্মত এবং কার্যকর সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, যা আগামী সাত দিনের মধ্যেই কার্যকর হবে। নতুন আইনে পূর্বের আইনের নয়টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। এর ফলে পূর্ববর্তী সাইবার সিকিউরিটি আইনের আওতায় যে সকল মামলা হয়েছে, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন আইনের অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি ধরা হয়েছে দুই বছর। এছাড়া কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তির অধিকার রক্ষা, প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে আইনের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদ ‘সিভিল প্রসিডিউর অ্যাক্ট’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে দেশের নাগরিক বিচারিক প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা প্রত্যাশা করতে পারবেন।
এর আগে দিনভর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য সদস্যরা। বৈঠকে চলমান প্রশাসনিক কার্যক্রম, আইন সংস্কার এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের মতামত ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড বিবেচনায় রেখেই আইন সংশোধনের পথে এগোচ্ছে। নতুন সাইবার আইন তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ এবং ব্যক্তির ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, নতুন আইনের খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে এবং তা এখন কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
সরকার আশা করছে, নতুন এই আইন কার্যকর হলে ডিজিটাল অপরাধ দমন যেমন সহজ হবে, তেমনি সাধারণ নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে। এই আইন প্রয়োগে যাতে কোনো রকমের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে অপব্যবহার না হয়, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এ বিষয়ে দেশের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে একটি সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান চালানো হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। আইনটি কার্যকর হওয়ার পরপরই সকল সরকারি দপ্তরে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আইন শুধু একটি আইনি কাঠামো নয়, বরং দেশের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবেও কাজ করবে। সময়োপযোগী এই উদ্যোগের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্য প্রযুক্তির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
repoter