
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হৃদয় মিয়াজীকে (২৩) কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিতাস থানা পুলিশ র্যাব-১১ এর সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করে।
হৃদয় মিয়াজী কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দূরলব্দী গ্রামের মাহবুব আলমের ছেলে। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে পরিচিত। গ্রেপ্তারের পর তাকে র্যাব-১১ এর কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদ উল্যাহ। তিনি জানান, হৃদয় মিয়াজীকে তার মামার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ঢাকায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে র্যাব-১১ এর হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় গত শনিবার বিকেলে। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীকে নিয়ে হাসাহাসির জেরে পারভেজের সঙ্গে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর পারভেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক তাকে ঘিরে ধরে।
এই সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে পারভেজের ওপর হামলা চালানো হয়, যার ফলে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর নিহত পারভেজের মামাত ভাই হুমায়ুন কবীর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ২৫-৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মামলাটি দায়েরের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শুরু করে এবং একাধিক জায়গায় অভিযান চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় হৃদয় মিয়াজীকে কুমিল্লায় তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছিল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তারা বলছে, পারভেজ হত্যার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।
র্যাব এবং পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অপরাধীদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তারা বলেন, এই নির্মম হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না এবং বিচার নিশ্চিত করা হবে।
পারভেজের পরিবার তার মৃত্যুতে শোকাহত এবং দ্রুত বিচার দাবিতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। তারা বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পারভেজের স্বপ্ন ছিলো ভবিষ্যতে দেশের জন্য কিছু করার। তার এভাবে প্রাণ হারানো শুধুমাত্র পরিবার নয়, গোটা সমাজের জন্যই এক গভীর শোকের বিষয়।
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে পোস্ট দিচ্ছেন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করছেন।
সরকারি পর্যায়ে এই ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার সম্ভব হয়।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তে অগ্রগতি পাওয়া গেলে দ্রুতই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
repoter