
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস আর নেই। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে রোমে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ভ্যাটিকান সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রোমে তার মৃত্যু ঘটে। ভ্যাটিকানের নিজস্ব টিভি চ্যানেলে কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল এই খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ‘প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের পবিত্র পিতা ফ্রান্সিস আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি আজ সকালে তার সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে গেছেন।’
পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম হয় আর্জেন্টিনায়। তার আসল নাম ছিল জর্জ মারিও বেরগোলিও। তিনি পোপ হওয়ার আগে বুয়েনোস আইরেসের আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি কার্ডিনাল পদে উন্নীত হন।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে পোপ বেনেডিক্ট ষোলো’র পদত্যাগের পর নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিকানে কার্ডিনালদের গোপন বৈঠক বা কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হয়। সেই কনক্লেভেই জর্জ বেরগোলিও পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পোপ ফ্রান্সিস নাম গ্রহণ করেন।
পোপ ফ্রান্সিস ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন একজন মানবিক, সহানুভূতিশীল ও সংস্কারমনা ধর্মগুরু হিসেবে। তিনি শুধু ক্যাথলিক গির্জার অভ্যন্তরে নয়, বরং গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা এবং শান্তির বার্তা নিয়ে কাজ করে গেছেন। বিশ্বাসের সীমা ছাড়িয়ে তিনি বারবার মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা তাকে সমগ্র বিশ্বে এক অনন্য মর্যাদা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। বয়সজনিত নানা রোগের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টসহ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই সব জটিলতার কাছেই হার মানেন তিনি।
তার মৃত্যুতে শুধু ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ভ্যাটিকানসহ বিশ্বজুড়ে গির্জাগুলোতে প্রার্থনা ও স্মরণসভা শুরু হয়েছে। বিশ্ব নেতারাও তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
পোপ ফ্রান্সিসের জীবন ছিল ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং বিশ্বশান্তির প্রতীক। তিনি একাধারে ধর্মীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন, আবার মানবতার কণ্ঠস্বর হিসেবে বিশ্বমঞ্চে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তার অনুপস্থিতি বিশ্ববাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিশ্বের ইতিহাসে পোপ ফ্রান্সিস এক উজ্জ্বল নাম হয়ে থাকবেন—একজন যিনি নিজের বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে শুধু ধর্ম নয়, বরং মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে নিজের জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
repoter