
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর গঠনের সিদ্ধান্তকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছে ১২ দলীয় রাজনৈতিক জোট। জোটের নেতারা মনে করেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের উচিত ছিল অন্তর্বর্তীকালীন একটি আলোচনার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের মতামত গ্রহণ করা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এক জরুরি সভায় জোট নেতারা রাখাইন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং সরকারের প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সভায় জানানো হয়, আরাকান অঞ্চলে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম হয়ে একটি মানবিক প্যাসেজ তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে রাখাইন অঞ্চলে যাতায়াত সহজ হয়। তবে জোটের নেতারা মনে করেন, এ উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের বিষয় জড়িত, যা এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়।
নেতারা বলেন, মানবিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই এবং জাতিসংঘের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায়। তবে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানা ব্যবহার করে অন্য দেশে প্রবেশাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতিগত, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
জোট নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মানবিক করিডোর গঠনের মাধ্যমে দেশ আরেকটি যুদ্ধ বা সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট এখনো সমাধান হয়নি এবং নতুন করে করিডোর দেওয়ার ফলে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মি অঞ্চলটির অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণে নিলেও রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ হয়নি। এতে করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাই স্পষ্ট হচ্ছে, মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী কিংবা আরাকান আর্মি— কেউই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়।
এছাড়াও মানবিক করিডোরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আঞ্চলিক রাজনীতি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশল। জোটের নেতারা বলেন, রাখাইনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মেরুকরণের সূচনা হতে পারে এবং এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কৌশলগত ও জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরি।
সভায় আরও বলা হয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে, কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
১২ দলীয় জোটের প্রধান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি শওকত আমিন, পিএনপি'র চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ মান্নানসহ বিভিন্ন দলের মহাসচিব ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, মানবিক করিডোর সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সর্বদলীয় মতবিনিময় এবং জাতীয় কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হোক।
repoter