
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের জোত কনেজপুর গ্রামে এএসআই রিনিউএ্যাবল এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি নামের একটি কারখানা ঘিরে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। দিনের বেলায় কারখানার গেটে তালা ঝুললেও রাতের আঁধারে টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদনের কাজ চলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। তারা জানায়, কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একদিকে শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক সমস্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর গত ১৬ মার্চ অভিযান চালিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে এবং গেটে একটি লাল রঙের নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। যদিও কিছুদিন পর সেটি সরিয়ে আবারো গোপনে চালু করা হয় কারখানাটি। অভিযোগ রয়েছে, রাতে ভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক এনে কাজ করানো হয় এবং ফজরের আগে সবকিছু গুটিয়ে ফেলা হয়।
কাশিমপুর ইউনিয়নের আবাদি জমির মাঝখানে স্থাপিত এই কারখানায় টায়ার পুড়িয়ে রাস্তার পিচ তৈরিতে ব্যবহৃত তেল তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত ধোঁয়া এবং তীব্র গন্ধ ছড়ায়, যা আশপাশের পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
কারখানার আশপাশের এলাকাবাসী জানায়, রাতে যখন কারখানা চলে, তখন চারপাশে ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। দুর্গন্ধে জানালা-দরজা খুলে রাখা দায় হয়ে পড়ে। কাছারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান জানান, তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আয়নাল হোসেন নামে একজন বলেন, ‘এই আপদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’ বৃদ্ধ শাহজাহান কবির বলেন, ‘এই যন্ত্রণায় আর থাকা যায় না। দেশে কি কোনো আইন নেই?’ কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, ‘এই কারখানার জন্য আমার সব বেগুন ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠের অন্য ফসলও শেষ।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতের বেলায় বাইরের শ্রমিক এনে গোপনে কারখানাটি চালানো হয়। দিনের বেলায় গেটে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায় না। স্কুলছাত্র রায়হান ও ভ্যানচালক রফিকুল জানান, তারা কখনো ভেতরে কী হচ্ছে তা দেখেননি। তবে প্রচুর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধের কারণে এলাকার পরিবেশ অত্যন্ত দূষিত হয়ে পড়েছে। তারা আরও জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর কিছুদিন আগে এসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কারখানাটি বন্ধ করলেও পরে তা খুলে ফেলা হয় এবং পুনরায় রাতের বেলায় কার্যক্রম শুরু করা হয়। পুরো কারখানাজুড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে, আর দিনের বেলায় কোনো প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় না।
কারখানাটির বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার সৌমেন মৈত্র। তিনি বলেন, ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগে এবং হালনাগাদ ছাড়পত্র না থাকার কারণে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। একই কথা জানান যশোরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. এমদাদুল হক। তিনি বলেন, কারখানায় টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হচ্ছিল, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সেটি বন্ধ করা হয় এবং তাদের জানা মতে সেটি এখনো বন্ধ রয়েছে।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, রাতের বেলায় কার্যক্রম গোপনে চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তারা নতুন করে পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানালে, কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক অভিযান চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর যেন পুনরায় সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা চায়, জনস্বাস্থ্য ও কৃষির সুরক্ষায় স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হোক এই কারখানা। কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও দূষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
repoter