
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ছাত্ররা একত্রিত হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এটি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে দলের নাম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, কমিটি গঠন এবং কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্ররা এই কাজগুলোর জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করে নতুন দলের মহাসচিব হতে পারেন, এমন আভাস পাওয়া গেছে। তবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল গঠন এবং পদত্যাগের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে সরকারে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলে থাকব না।’
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক এবং আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করেন। এরপর থেকেই ছাত্ররা নতুন দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। বর্তমানে এই দলটির কাঠামো তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ‘আমরা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দলের ঘোষণা দিতে চাই। দলের নাম, কাঠামো, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন দলটি সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে হবে, যেখানে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদী কাঠামোর কোনো স্থান থাকবে না। পুরোনো সমস্যাগুলো যেমন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বা বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হবে না।’
নতুন দলের নাম এবং অর্থ সংগ্রহের বিষয়েও আলোচনা চলছে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ‘জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের ফোরাম থেকে সহায়তা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’
নতুন দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং এর মূল উদ্দেশ্য দেশের কল্যাণ সাধন করা। যদি নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচারের সিদ্ধান্ত না আসে, তবে তাদের লক্ষ্য থাকবে জুলাই-আগস্টের খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, নতুন দলটি রাজনৈতিক জোটেও যোগ দিতে পারে এবং ইতিমধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ বলেন, ‘নতুন দল গঠনের কাজ চলছে, এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দল ঘোষণা করতে চাই। এখনও দলের নাম, আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব কে হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।’
এক কেন্দ্রীয় সদস্য জানান, ‘তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন দলে যোগ দিতে পারেন, তবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বা অন্য উপদেষ্টার পদত্যাগের সম্ভাবনা নেই।’
নতুন দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা চলছে এবং বিভিন্ন দেশে তরুণদের দ্বারা গঠিত জনপ্রিয় দলগুলোর গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার দলের গঠনতন্ত্রও অধ্যয়ন করা হচ্ছে, যাতে সেগুলোর সাহায্যে নতুন দলের গঠনতন্ত্র তৈরি করা যায়।
নতুন দলের প্রথম কর্মসূচি হতে পারে একটি লংমার্চ। রংপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাড়ি পর্যন্ত এই লংমার্চ হবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে।
নতুন দল গঠনকে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। নতুন দল যদি গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে কাজ করে, তবে তা দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য উপকারি হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো. বুরহান উদ্দিন নোমান বলেন, ‘ছাত্ররা যদি দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে দল গঠন করে, তাহলে তাদের সফলতা আসবেই।’
repoter