
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে আয়োজিত এক কর্মী সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দলটি প্রয়োজনীয় সময় দিতে প্রস্তুত। তিনি উল্লেখ করেন, "আমরা যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৫ বছর অপেক্ষা করতে পারি, তবে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য দুই-চার মাস আগে বা পরে হওয়া আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়। তবে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনটি নিরপেক্ষ হবে কিনা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে রাজি।"
শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, বিগত সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ এবং বিভাগগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। এত বড় সংস্কার অল্প সময়ে করা সম্ভব নয়। এটি একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক ও নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে। বিশেষ করে, পুলিশ-প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান এবং জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে সংস্কার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান, "সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে ছয় মাস সময় নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করুন।"
সমাবেশে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস
দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামীর এমন সমাবেশে ভোলার সাত উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত হয়। রাত থেকেই নেতাকর্মীরা মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন এবং ভোরে ফজরের নামাজের পর খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন।
সমাবেশকে ঘিরে ভোলার দ্বীপ জেলা জুড়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকের মতে, এত বছর পর এ ধরনের সমাবেশ দলটির নতুন উদ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করার ইঙ্গিত দেয়।
নেতৃবৃন্দের বক্তৃতার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেন। সমাবেশে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের ভাষায়, "নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কেবল কল্পনা। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে।"
জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নির্বাচন পদ্ধতির উন্নয়নে ঐকমত্যে পৌঁছানো। এর মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে এবং একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রকাশ্যে জামায়াতের সমাবেশ: নতুন দিকনির্দেশনা?
প্রকাশ্যে জামায়াতের এই কর্মী সমাবেশকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। অনেকের মতে, এটি দলটির জন্য নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে চাপের মুখে থাকা দলটি এই সমাবেশের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি জানান দিল।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, "আমাদের লক্ষ্য কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমরা জনগণের সঙ্গে থাকব এবং তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলব।"
এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এবং উচ্ছ্বাস স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, জামায়াতে ইসলামী তাদের সাংগঠনিক শক্তি পুনর্গঠন করছে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায়।
repoter