
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভেদ সৃষ্টি হলে দেশের ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে সেই মতপার্থক্যকে বিভেদে রূপান্তরিত করা উচিত নয়। তারেক রহমান মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান আরও বলেন, "আমরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন দিক থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য দেশ গঠন করা এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হলে স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।"
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় বিএনপি। তবে, তিনি এই আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর সরকারের প্রতি জনগণের যে সমর্থন ছিল, সেটি যেন বজায় রাখা হয়। "মানুষ যাতে তাদের আস্থা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে, সেটি আমাদের চাহিদা," বলেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান জানান, বিএনপির মধ্যে কিছু রাজনৈতিক বন্ধুরা মতপার্থক্য সৃষ্টি করছেন। তবে, এসব মতপার্থক্যকে বিভেদে রূপান্তরিত করতে চাই না। তিনি বলেন, "মতপার্থক্য থাকলে আলোচনা করে সমাধান হবে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক দলগুলো বিভেদে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বিভেদের সুযোগ নেবে অপশক্তি, এবং দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। বিগত ১৫ বছর মানুষ নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা করবে।"
তারেক রহমান বলেন, তারা জানেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে জনগণের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। তবে, তিনি বলেন, বিএনপি চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন, "যে সরকার জনগণের ভোট অধিকার লুণ্ঠন করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে।"
এ সময়, তিনি দেশবাসীর আস্থা অর্জন করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকব, গণতন্ত্র তত বেশি সুসংহত হবে।"
তারেক রহমান দেশবাসীর কাছে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চাই এবং যে দল দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে, তারাই জনগণের সমর্থন পাবে।"
তিনি বিএনপির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ৪৫ বছর আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এবং দলটির লক্ষ্য ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। "গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র নির্বাসনে ছিল, এবং আমরা গুম, খুন ও অত্যাচারের শিকার হয়েছি। তবে, আজ বিএনপি জনগণের আস্থার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে," বলেন তারেক রহমান।
তিনি আরও বলেন, "গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা নির্বাচন দাবি করছি এবং জনগণের কাছ থেকে ভোট চাইছি, এটি আমাদের মৌলিক অধিকার।"
তারেক রহমান বলেছেন, "বিভেদ সৃষ্টি হলে অপশক্তি সুবিধা নেবে। আমরা যদি গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে পারি, তবে জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারব। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।"
তিনি কুমিল্লা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির উদ্দেশ্যে বলেন, "তোমরা কুমিল্লা নগরবাসীর আস্থা অর্জন করতে হবে এবং তৃণমূল থেকে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করে দলের ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে।"
এ সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন, কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম প্রমুখ।
এর আগে, বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা টাউন হল মাঠ এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। সম্মেলনটি সমাবেশে পরিণত হয়, এবং সম্মেলনে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায়, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবুকে সভাপতি, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম আহবায়ক রাজিউর রহমান রাজিবকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
repoter