
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটলেও এ বিষয়ে সময়মতো উপদেষ্টাকে অবহিত করেননি সংশ্লিষ্ট সচিবেরা ও সংস্থার প্রধানেরা। ফলে বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেলপথ–বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বিষয়টি জানতে বাধ্য হন। এমন পরিস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা না ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
আজ রবিবার জারি করা একটি দাপ্তরিক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার খুলনা অঞ্চলে বড় পরিসরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে এবং একই সময়ে মেট্রোরেলের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। দুটি ঘটনাই জনগণের ভোগান্তির কারণ হলেও সংশ্লিষ্ট সচিবেরা কিংবা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপদেষ্টাকে জানাননি। এমনকি গণমাধ্যম কিংবা যাত্রীদের দিকেও সময়মতো তথ্য পাঠানো হয়নি।
নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এখন থেকে যেকোনো গ্রাহকসেবা বা যাত্রীসেবা বিঘ্নের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় টেলিভিশনের স্ক্রলে সংবাদ প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি পরিষেবা পুনরায় চালু হলে সেটিও জানাতে হবে এবং গ্রাহকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, 'গ্রাহক ও যাত্রীসেবা কোনো দয়া নয়, বরং এটি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।'
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধের ঘটনায় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানতে চান, কেন এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তাঁকে অবহিত করা হয়নি এবং কেন গণমাধ্যম বা যাত্রীদের কাছে দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্র জানায়, শনিবার মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেলে উপদেষ্টা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। বিদ্যুৎ বিভাগ তখন জানান যে মেট্রোরেলের কারিগরি ত্রুটির কারণে পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই উপদেষ্টাকে কিছু জানায়নি।
একই ধরনের অব্যবস্থাপনা খুলনা অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেন এবং সঠিক তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হন। এতে গ্রাহকদের দুর্ভোগ বাড়ে এবং প্রশাসনের ওপর আস্থা ক্ষুণ্ন হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট। এমনকি নিজেদের মধ্যে সঠিক তথ্য আদান–প্রদান না থাকায় সংকট ব্যবস্থাপনায় দেরি হয়।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সংশ্লিষ্টদের কাছে কৈফিয়তও চেয়েছেন এবং পরবর্তী নির্দেশনা অনুসারে ভবিষ্যতে কোনো পরিষেবা বিঘ্নের ঘটনা ঘটলে টেলিভিশন স্ক্রলে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ প্রচার বাধ্যতামূলক করেছেন। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সচিব, সংস্থার প্রধান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বিষয়টি নজরদারিতে রাখতে হবে এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে হবে।
সরকারি নির্দেশনায় এবার পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, জনগণের ভোগান্তি কমানো এবং আস্থার সংকট দূর করতে এখন থেকে সব ধরনের সেবা বিঘ্নের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রচার করতে হবে। ঘটনার পরপরই জনগণকে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানানো এবং পরিষেবা পুনরায় চালু হলে তা তুলে ধরার মাধ্যমেই সঠিক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর ভেতরে এই নির্দেশনা ঘিরে বাড়তি সতর্কতা লক্ষ্য করা গেছে। অনেক সংস্থা ইতিমধ্যে নিজেদের অভ্যন্তরীণ প্রটোকল পর্যালোচনা শুরু করেছে এবং দ্রুত তথ্য পাঠানোর জন্য বিশেষ সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের তাৎক্ষণিক তথ্য প্রচার ব্যবস্থার ফলে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সক্ষমতা দৃশ্যমান হবে। তবে শুধু নির্দেশ দিলেই হবে না, বাস্তবে তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
উপদেষ্টার এই নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, ভবিষ্যতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো অবস্থা যেমন—বিদ্যুৎ বিভ্রাট, গণপরিবহন বিঘ্ন, যাত্রী দুর্ভোগ ইত্যাদি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে অবহিত করতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
repoter