ঢাকা,  সোমবার
১৬ জুন ২০২৫ , ০৮:১৩ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* আবারও সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট, আতঙ্কে জনসাধারণ * উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু * যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী গণবিক্ষোভ * আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত চারজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের * পুলিশ নয়, ভারি মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি * ঈদযাত্রায় খানাখন্দ ও বৃষ্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক: অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার * বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ফাহামিদুলের, একাদশে নেই শমিত সোম

উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

repoter

প্রকাশিত: ১১:৪৫:৩৬পূর্বাহ্ন, ১৫ জুন ২০২৫

আপডেট: ১১:৪৫:৩৬পূর্বাহ্ন, ১৫ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশী যাওয়ার পথে গৌরীকুণ্ডের জঙ্গলে দুর্ঘটনা, নিহতদের মধ্যে পাইলট ও এক শিশু তীর্থযাত্রী

ভারতের উত্তরাখণ্ডে এক মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। রোববার ভোরে কেদারনাথ ধাম থেকে গুপ্তকাশীর দিকে যাত্রারত একটি হেলিকপ্টার মাঝপথে গৌরীকুণ্ড ও সোনপ্রয়াগের মধ্যবর্তী এলাকায় জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারটি আর্যন এভিয়েশনের মালিকানাধীন ছিল। এতে ছয়জন তীর্থযাত্রী ও একজন পাইলট ছিলেন।

দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছে ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। উত্তরাখণ্ড সিভিল এভিয়েশন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাত্র ১০ মিনিটের উড়ানের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

নিহত তীর্থযাত্রীরা উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট থেকে এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া দেখে স্থানীয় কিছু মানুষ—যারা সেসময় পশুদের জন্য ঘাস সংগ্রহে জঙ্গলে ছিলেন—তারা প্রশাসনকে খবর দেন। খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে রওনা হয় এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ এর উদ্ধারকারী দল।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে এক্স (সাবেক টুইটার) -এ লিখেছেন, “রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার অত্যন্ত বেদনাদায়ক খবর পেয়েছি। এসডিআরএফ, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে। আমি সকল যাত্রীর নিরাপদ উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করছি।”

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া না গেলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং খারাপ আবহাওয়ার যৌথ প্রভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।

এই দুর্ঘটনাটি চলতি বছর হিমালয়ের কেদারনাথ এলাকায় হেলিকপ্টার সম্পর্কিত পঞ্চম দুর্ঘটনা। উল্লেখযোগ্য যে, চলতি বছরের ২ মে কেদারনাথ মন্দিরের দরজা খোলার পর তীর্থযাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেইসঙ্গে হেলিকপ্টার চলাচলও বেড়েছে।

এর আগে, গত ৭ জুন কেদারনাথের দিকে যাত্রারত আরও একটি হেলিকপ্টারে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। সেটিকে জরুরি ভিত্তিতে একটি সড়কে অবতরণ করতে হয়। ওই সময় অবতরণের সময় হেলিকপ্টারটির পেছনের রটার একটি পার্ক করা গাড়ির ওপর পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় যাত্রীরা অক্ষত থাকলেও পাইলট সামান্য আহত হন।

ক্রমাগত এই দুর্ঘটনাগুলো প্রশ্ন তুলছে পাহাড়ি অঞ্চলে হেলিকপ্টার চলাচলের নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থাপনার উপর। বিশেষত, কেদারনাথের মতো দুর্গম তীর্থস্থানে যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়শ ঘটে থাকে এবং উচ্চতা ও আবহাওয়া সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকে, সেখানে উড়ান পরিচালনায় আরও সতর্কতা ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে।

উদ্ধারকাজ ও তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, নিহতদের মরদেহ শনাক্তের কাজ শেষ হলে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি দোষী থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় সরকার।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গভীর শোক জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে এবং তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

উত্তরাখণ্ডে কেদারনাথ ধামের মতো গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানগুলোতে হেলিকপ্টার সার্ভিস দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য এটি একটি দ্রুত এবং সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর ফলে এই ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং পাইলটদের অভিজ্ঞতা, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও জরুরি পরিস্থিতির দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাও এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হেলিকপ্টার চলাচলের নিয়মনীতি, মান ও তদারকি আরও কঠোর করার পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেদারনাথসহ অন্যান্য উচ্চপাহাড়ি তীর্থক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বিমান চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।

উত্তরাখণ্ডের এই দুর্ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, বরং ভারতের হেলিকপ্টার পরিবহন নীতির ওপরও একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন টেনে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তদন্ত শেষ হলে এই দুর্ঘটনার মূল কারণ জানা যাবে এবং ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

repoter