
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সিনেট পহেলগাঁও হামলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দেশটির উচ্চকক্ষের সংসদে উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের উত্থাপিত এক প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, পাকিস্তানকে হামলার সঙ্গে জড়িত করার যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এতে ভারতের দিক থেকে সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অভিযানের দ্রুত এবং যথাযথ জবাব দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সিনেটে উপস্থাপিত প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে এবং কোনো ধরণের সামরিক উসকানি, পানি সন্ত্রাসবাদ বা আক্রমণের মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষম। ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান একটি পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষম দেশ। অতীতে যেভাবে আক্রমণের জবাব দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতেও সেভাবেই জবাব দেওয়া হবে যদি ভারত চোখ রাঙানোর চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, ভারতের যেকোনো দুঃসাহসিক পদক্ষেপ গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এর ফলে আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দার জাতিকে আশ্বস্ত করে বলেন, পাকিস্তান তার ভূখণ্ড ও স্বার্থ রক্ষায় কখনও পিছপা হবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) এক বিবৃতিতে পহেলগাঁও হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতকে তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা না করার অনুরোধ জানায়। এনএসসি জানায়, এই ধরনের দোষারোপের খেলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করে।
সিনেটে পাস হওয়া প্রস্তাবে ভারতের একতরফা ও বেআইনিভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তেরও তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। পাকিস্তান এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে মেনে নেবে না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের ভূখণ্ডে ভারতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুপ্তহত্যা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ঘটনাগুলোর জবাবদিহি হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের কার্যকলাপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
প্রস্তাবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়, নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার সঙ্গে দেশটির কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই, বরং তা পাকিস্তানের জাতীয় মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিরোধী। পাকিস্তান সর্বদা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সেই অবস্থান বজায় রাখবে বলে জানানো হয়।
এদিকে, জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে উভয় দেশের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং উত্তেজনা প্রশমনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় তাদের জড়িত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তারা দাবি করে, ভারতের এমন অভিযোগ শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা নতুনভাবে তীব্র হয়ে উঠেছে। পহেলগাঁও হামলা সেই উত্তেজনায় ঘৃতাহুতি দিয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া জানানো বিষয়টিকে একধরনের কূটনৈতিক প্রতিরোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বলছে, তারা শান্তি ও সংলাপে বিশ্বাসী, কিন্তু সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবে না। ভারতকেও এই বার্তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রস্তাবে।
এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ কতটা উন্মুক্ত, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তবে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত এবং যেকোনো দিক থেকে আসা হুমকির যথাযথ জবাব দিতে সক্ষম।
repoter