ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৭ জুন ২০২৫ , ০১:৩৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* আবারও সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট, আতঙ্কে জনসাধারণ * উত্তরাখণ্ডে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু * যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী গণবিক্ষোভ * আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত চারজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির * ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের * পুলিশ নয়, ভারি মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের কাছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি * ঈদযাত্রায় খানাখন্দ ও বৃষ্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক: অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার * বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক ফাহামিদুলের, একাদশে নেই শমিত সোম

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, অংশ নেয় হাজারো মানুষ

repoter

প্রকাশিত: ১০:৪৮:৪১পূর্বাহ্ন, ২০ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১০:৪৮:৪১পূর্বাহ্ন, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। শনিবার (১৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে একযোগে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনকারীরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন ‘৫০৫০১’, যার অর্থ—৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি প্রতিবাদ, কিন্তু একটি অভিন্ন উদ্দেশ্য।

এই বিক্ষোভের আয়োজকরা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর ২৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আন্দোলনের সময়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই অনেক বিক্ষোভকারীর হাতে ‘নো কিংস’ লেখা পোস্টার দেখা যায়, যা ইংরেজ রাজতন্ত্রবিরোধী আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল অভিবাসন নীতি এবং সরকারি ব্যয়ের ছাঁটাই। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করে বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন কিলমার আবরেগো গার্সিয়া নামের এক মার্কিন অভিবাসীকে ফেরত আনার, যাকে ভুলবশত এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই দাবির পক্ষে একাধিক শহরে মিছিল হয়। গার্সিয়ার সমর্থনে অংশ নেওয়া এক বিক্ষোভকারী গিহাদ এলজেন্দি সিএনএন-কে বলেন, “ট্রাম্প চাইলে এল সালভাদরের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।”

বিক্ষোভকারীরা আরও প্রতিবাদ করেন “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি” বা ডিওজিই প্রকল্পের বিরুদ্ধে, যেটি ট্রাম্প প্রশাসন গঠন করেছে সরকারি ব্যয় কমানো ও কর্মসংস্থান হ্রাসের লক্ষ্যে। অনেকেই এই প্রকল্পকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, শিকাগো, হিউস্টন, ফিনিক্সসহ বড় বড় শহরের পাশাপাশি কিছু টেসলা শোরুমের সামনেও এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন।

ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটন ও কনকর্ড অঞ্চলেও আয়োজিত হয় ৫০৫০১ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশেষ অনুষ্ঠান। এসব অঞ্চলে ১৭৭৫ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। এই স্মৃতিকে সামনে রেখে টমাস ব্যাসফোর্ড নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “এটি আমাদের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি কঠিন সময়। আমি চাই আমার নাতিরা বুঝুক, এই দেশ কিভাবে গড়ে উঠেছে এবং কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হয়।”

শনিবারের আন্দোলনগুলো মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু কিছু জায়গায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক ঘটনায় ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান সুহাস সুব্রামানিয়াম এক ট্রাম্প-সমর্থকের সঙ্গে সরাসরি তর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভের পাশাপাশি জনমত জরিপেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমতির দিকে রয়েছে। গ্যালাপের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে, যেখানে জানুয়ারিতে তা ছিল ৪৭ শতাংশ। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৫২ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম কোয়ার্টারে গড় জনপ্রিয়তা ছিল ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাতেও ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর সন্তুষ্টি কমে এসেছে। রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৭ শতাংশ নাগরিক ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করছেন, যেখানে জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৪২ শতাংশ।

যদিও শনিবারের ‘৫০৫০১’ বিক্ষোভকে ব্যাপক বলে ধরা হচ্ছে, এটি চলতি মাসের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত ‘হ্যান্ডস অফ’ আন্দোলনের তুলনায় ছোট ছিল। ওই আন্দোলনে ১২০০টিরও বেশি স্থানে প্রতিবাদ হয়েছিল, যার বিস্তৃতি ছিল ৫০টি অঙ্গরাজ্য জুড়ে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ কর্মসূচি।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে এই ধরনের ধারাবাহিক বিক্ষোভকে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনা ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো জনগণের এই প্রতিক্রিয়া আগামী দিনের মার্কিন রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

repoter